বিতর্কিত এক আইনের আওতায় গত এক বছরে কুয়েত প্রায় ২ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। আইনটি মূলত সরকারের সমালোচক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নিয়ে মন্তব্যকারী এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের লক্ষ্য করে প্রণয়ন করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রণীত এই আইনে আমির শেখ জাবের আল-সাবাহ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সমালোচনা বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে নাগরিকত্ব স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা—মোট ক্ষতিগ্রস্তদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই নারী। বিশেষ করে যেসব বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারী কুয়েতি পুরুষকে বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন, তারাই বেশি আক্রান্ত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের মার্চে একদিনেই ৪০০ জনের বেশি মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সরকার নাগরিকত্ব বাতিলের কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান প্রকাশ বন্ধ রেখেছে, যা এই অভিযানের ব্যাপ্তি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

নাগরিকত্ব বাতিল হওয়া নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যসেবাসহ মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের সম্পত্তির মালিকানার অধিকারও বাতিল করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে, তবে তাদের ভবিষ্যৎ কল্যাণের কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না সরকার।

১৯৭০-এর দশকে কুয়েত রাজনৈতিক শরণার্থী, বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা জনগণের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। সে সময় মধ্যপ্রাচ্যে এমনকি ইউরোপের তুলনায়ও কুয়েতকে বেশি নিরাপদ আশ্রয় মনে করা হতো।

তবে ২০২৩ সালে শেখ জাবের আল-সাবাহ ক্ষমতায় আসার পর দেশটির গণতান্ত্রিক পরিবেশে নাটকীয় পরিবর্তন শুরু হয়। সমালোচকদের মতে, একসময়ের আশ্রয়স্থল কুয়েত এখন নিজের নাগরিকদের জন্যই নিপীড়নের উৎসে পরিণত হয়েছে।

অনেক পর্যবেক্ষক কুয়েতি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে সহিংস ও পিতৃতান্ত্রিক আখ্যা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক আইনে জোরপূর্বক রাষ্ট্রহীনতা অবৈধ হলেও এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী দেশগুলো এখনো নীরব রয়েছে।

নতুন বিধিমালার আওতায় দ্বৈত নাগরিকত্বধারীরাও নাগরিকত্ব বাতিলের মুখে পড়ছেন।

সূত্র: মিডল ইস্ট আই