৪০ হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতি, বিমানের ৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি
রাজধানীর বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টার (বিসিএফসিসি)-এ তিন দিনব্যাপী দেশের বৃহত্তম পর্যটন উৎসব ১৩তম বিমান বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) ২০২৫ আজ (শনিবার) শেষ হয়েছে। এবারের মেলায় প্রায় ৪০ হাজার দর্শনার্থী অংশ নেন, যেখানে মোট বিক্রয় ও বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা ছাড়ায়। শুধু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সই তিন দিনে প্রায় ৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করে।
দেশের পর্যটন শিল্পের শীর্ষ স্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এ মেলার আয়োজন করে। এবারের আসরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ছিল টাইটেল স্পন্সর, আইএইচজি গোল্ড পার্টনার এবং বিকাশ পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিল।
মেলার শেষ দিনে অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলোকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নুজহাত ইয়াসমিন। আরও উপস্থিত ছিলেন টোয়াবের সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান, পরিচালক (বাণিজ্য ও মেলা) মো. তাসলিম আমিন শোভনসহ অন্যরা।
প্রধান অতিথি হিসেবে নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, একসময় ট্যুরিজম ছিল একটি শখ। মানুষ সবসময় অজানাকে জানতে চায়, অচেনাকে চিনতে চায়, অদেখাকে দেখতে চায়– এই কৌতূহল থেকেই পর্যটনের সূচনা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্যুরিজম এখন একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্পে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এই শিল্প এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশেও পর্যটন শিল্প রয়েছে, তবে আমরা এখনো সেই কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে পৌঁছাতে পারিনি। এর মানে এই নয় যে আমাদের উপাদান বা সম্ভাবনা নেই, বরং আমরা এখনো তা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, ট্যুরিজম বোর্ডে যোগ দেওয়ার পর বুঝেছি, ট্যুরিজমের উপাদান অনেক রকম হতে পারে– এটা কোনো স্থির বিষয় নয়। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, বরং সংস্কৃতি, খাবার, রীতিনীতি– সবকিছু মিলেই ট্যুরিজম। এটি কেবল অর্থনৈতিক খাত নয়, বরং এখানে আইডিয়া বা সৃষ্টিশীলতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা কিছু আমাদের নিজস্ব, সেটাই আমাদের ট্যুরিজম উপাদান। অন্য দেশের মতো করে দেখানোর প্রয়োজন নেই, বরং স্থানীয়ভাবে, নিজের জায়গার বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখে সেটাকে উপস্থাপন করতে হবে।
নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, ট্যুরিজমের বিবর্তনে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো পরিবেশ। আমরা অবশ্যই আনন্দ চাই– অজানাকে দেখা, অচেনাকে চেনা কিংবা অদেখাকে দেখা– কিন্তু এখন ট্যুরিজম শুধুই শখ নয়, এটি একটি পেশা। এর সঙ্গে ১২টিরও বেশি উপখাত যুক্ত, যা প্রায় ২০টির কাছাকাছি হবে। অনেকেই কোনো না কোনোভাবে এ খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত, যদিও অনেক সময় আমরা তা বুঝি না। তবে কোনো কিছুই পরিবেশের ঊর্ধ্বে নয়। এর মানে এই নয় যে পরিবেশ রক্ষায় সমন্বয় করলে খাতটি পিছিয়ে যাবে, বরং আমাদের উচিত বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে ট্যুরিজমকে এগিয়ে নেওয়া।
আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, এবারের মেলায় এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, ট্যুর অপারেটর, হাসপাতাল, ক্রুজ লাইনসহ বিভিন্ন ভ্রমণ ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ৮০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, যেখানে মোট ১৫০টি স্টল স্থাপন করা হয়। তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে প্রায় ৪০ হাজার দর্শনার্থী মেলায় ঘুরেছেন।
আয়োজকদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, মেলায় মোট বিক্রয় ও বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া এবারের মেলায় অংশ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স, এয়ার আরাবিয়া, থাই এয়ারওয়েজ, এয়ার এশিয়া, তুর্কিশ এয়ারলাইন্স ও ড্রুক এয়ারসহ দেশি-বিদেশি বহু প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ তিন দিনে প্রায় ৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করেছে।
অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত সন্তোষজনক সাড়া পেয়েছে বলে জানায় টোয়াব। হোটেল ও রিসোর্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ ছাড়ে রুম ও ভ্রমণ প্যাকেজ বিক্রি করেছে। ছয়টি হোটেল ও রিসোর্ট তাদের শেয়ার বিক্রি করেছে, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে।
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন এক্সিবিটর, পার্টনার, স্পন্সর, টোয়াবের বোর্ড অব ডিরেক্টরস, কোম্পানি সেক্রেটারি এবং বিটিটিএফ কমিটির কনভেনাররা। এবারের মেলায় পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানের জাতীয় পর্যটন সংস্থা ও ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন অংশ নেয়। এ ছাড়া মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, তুরস্ক এবং স্বাগতিক বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল এজেন্টরাও অংশগ্রহণ করে। মেলা চলাকালীন দর্শনার্থীদের জন্য অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ মূল্যছাড়ে সেবা ও পণ্য প্রদর্শন করে, যার মধ্যে দেশি-বিদেশি গন্তব্যে এয়ার টিকিট, তারকা হোটেলের রুম বুকিং ও আকর্ষণীয় ভ্রমণ প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তিন দিনের মেলায় বিটুবি সেশন, সেমিনার, অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান ও কান্ট্রি প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়। মেলার উদ্বোধনের দিনে বাংলাদেশ ও নেপালের ট্রাভেল ট্রেড শিল্পের সংযোগ স্থাপন শীর্ষক বিটুবি নেটওয়ার্কিং ইভেন্টসহ ফিলিপাইন, মালদ্বীপ, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এসব দেশের মধ্যে বিটুবি সেমিনার আয়োজন করা হয়। মেলায় দেশের পর্যটন খাতে অবদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন তিন সাংবাদিকসহ ১৩ জন।
দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং দেশের পর্যটন গন্তব্য ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্য ছিল আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র পুরস্কার এবং প্রবেশমূল্যে বিকাশের বিশেষ ক্যাশব্যাক অফার।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার তিন দিনব্যাপী এ মেলা প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
Make Comment
Login to CommentPopular News
Subscribe to News Letter
Latest News
Weather Outlook
Clear
Dhaka, Bangladesh
Wind: 10.8 kmph · Precip: 0 mm · Pressure: 1009 mb
26.1°C
Thu
27.5°C
Fri
27.1°C
Sat
25.7°C