বিমান ভ্রমণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে: যাত্রীরা উচ্চমাত্রার আল্ট্রাফাইন দূষণের মুখে
ছবি: সংগৃহীত
প্যারিসের ইউনিভার্সিতে প্যারিস সিতে (Université Paris Cité)–এর গবেষকদের নেতৃত্বে একদল ফরাসি বিজ্ঞানী বিমান কেবিনে অতিক্ষুদ্র কণাদূষণ (Ultrafine Particles) পরিমাপ করতে বিশেষ যন্ত্রপাতি তৈরি করেন। এসব যন্ত্র প্যারিসের শার্ল দ্য গল বিমানবন্দর থেকে ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীবাহী বিমানে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হয়। কেবিনের সামনের সারির খালি আসনে কিংবা গ্যালিতে যন্ত্রগুলো রাখা হয়েছিল।
গবেষকরা জানান, অতিক্ষুদ্র কণাগুলো চোখে দেখা যায় না এবং প্রচলিত মনিটরিং পদ্ধতিতে ধরা পড়ে না। সে কারণেই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনেও এগুলো সাধারণত অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ২০২১ সালে ডাচ হেলথ কাউন্সিল ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে দেয়—এ ধরনের কণা ফুসফুসে প্রদাহ, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদরোগ এমনকি ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেও ঝুঁকি তৈরি করে। যদিও গবেষণাগুলোর পদ্ধতিগত পার্থক্যের কারণে ডব্লিউএইচও তখন নির্দিষ্ট মান নির্ধারণ করতে পারেনি। পরবর্তীতে নেদারল্যান্ডসে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা যায়, দীর্ঘদিন অতিক্ষুদ্র কণার সংস্পর্শে থাকলে অকালমৃত্যু, এমনকি ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।
গবেষণায় কিছুটা স্বস্তির খবরও রয়েছে। বিমানের ক্রুজিং উচ্চতায়, তুলনামূলক পরিষ্কার বাতাসে কেবিনে অতিক্ষুদ্র কণার মাত্রা খুব কম থাকে। তবে মাটিতে অবস্থানের সময় পরিস্থিতি ভিন্ন। যাত্রী ওঠানামা এবং বিমান ট্যাক্সি করার সময় কেবিনে এই কণার ঘনত্ব সর্বোচ্চ ছিল। গড়ে এ মাত্রা ডব্লিউএইচও নির্ধারিত ‘উচ্চ’ সীমার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। উড্ডয়নের পর ধীরে ধীরে দূষিত বাতাস বেরিয়ে গেলেও অবতরণের সময় আবার মাত্রা বাড়ে—সম্ভবত বিমানপথের কাছাকাছি ও বিমানবন্দরের আশপাশের উচ্চ দূষণের কারণে। গন্তব্য বিমানবন্দরেও একই চিত্র দেখা গেছে।
কালো কার্বন বা স্যুট কণার ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়—বিমানবন্দরে অবস্থানের সময়ই এগুলোর মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
বিশ্বজুড়ে এ বছর প্রথমবারের মতো বিমানযাত্রীর সংখ্যা ৫ বিলিয়ন ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ সড়ক পরিবহন ও শিল্পকারখানার তুলনায় বিমানের দূষণ নিয়ন্ত্রণ এখনো তুলনামূলকভাবে দুর্বল—যা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন গবেষকরা।
এ ছাড়া পৃথক এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে বিমানবন্দরে কর্মরত ২০ লাখের বেশি বেসামরিক ও সামরিক কর্মীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা দূষণের স্বাস্থ্যপ্রভাব নিয়ে গবেষণা খুবই সীমিত।
গবেষণায় আরও বলা হয়, শার্ল দ্য গল বিমানবন্দর থেকে নির্গত অতিক্ষুদ্র কণা শুধু বিমানবন্দরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তা আশপাশের জনপদেও ছড়িয়ে পড়ে। বিমানবন্দর থেকে এক কিলোমিটার দূরের বাতাসে কণার ঘনত্ব প্রায় প্যারিসের ব্যস্ত রিং রোডের কয়েক মিটার দূরের বাতাসের সমান। লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে পরিধি বেড়ার ৫০০ মিটার দূরে কণার মাত্রা কেন্দ্রীয় লন্ডনের ব্যস্ততম সড়কের পাশের চেয়েও বেশি পাওয়া গেছে।
প্যারিসে শার্ল দ্য গল থেকে নির্গত অতিক্ষুদ্র কণা ৫ কিলোমিটারের বেশি দূরেও শনাক্ত করা গেছে। আর লন্ডনে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে আসা কণা পশ্চিম ও মধ্য লন্ডনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে—যার অর্থ, লাখো মানুষ প্রতিদিন এই দূষিত বাতাস শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
Make Comment
Login to CommentPopular News
Subscribe to News Letter
Latest News
Weather Outlook
Clear
Dhaka, Bangladesh
Wind: 6.8 kmph · Precip: 0 mm · Pressure: 1012 mb
18.1°C
Tue
22.3°C
Wed
22.1°C
Thu
21.6°C